বাংলাদেশের ইনিংস শেষে আনরিখ নরিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা রান তাড়া করব।’
৩৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর নরিয়েদের হাসি মিলিয়ে যেতে বসেছিল।
কিন্তু বাংলাদেশের ৮৪ রানের জীর্ণশীর্ণ ইনিংস মাহমুদউল্লাহদের মুখের হাসি যে আগেই কেড়ে নেয়।
তাই তাসকিনের জোড়া আঘাত সামলে ৩৯ বল ও ছয় উইকেট হাতে রেখে আবুধাবিতে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।
সেমিফাইনালের আশা কার্যত আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। টানা চতুর্থ হারে কাল গাণিতিক সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল।
বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলংকারও বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। চার ম্যাচে শ্রীলংকার জয় একটি, বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা শূন্য।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি এখন মাহমুদউল্লাহদের জন্য শুধুই নিয়মরক্ষার উপলক্ষ্য।
অন্যদিকে হার দিয়ে সুপার টুয়েলভ শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা টানা তৃতীয় জয়ে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করল। টি ২০ সংস্করণে শেষ ১১ ম্যাচে এটি তাদের দশম জয়।
সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া বাংলাদেশের স্বপ্ন ছারখারের মূল দায় ব্যাটারদের। আবুধাবির উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল।
কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা কাল যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাতে উইকেটকে কাঠগড়ায় তোলার সুযোগ নেই।
২২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ধুঁকতে ধুঁকতে ১০ বল বাকি থাকতেই ৮৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
এবারের আসরে এটাই বাংলাদেশের সর্বনিু স্কোর। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু মেহেদী হাসান (২৭), লিটন দাস (২৪) ও শামীম হোসেন (১১)।
৮৪ রানের ছোট্ট পুঁজি নিয়ে যথাসাধ্য লড়াই করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। চোটের ছোবলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন সাকিব আল হাসান।
পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকেও কাল খেলানো হয়নি। তারপরও শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রথম ওভারেই রিজা হেনড্রিকসকে ফেরানোর পর ষষ্ঠ ওভারে আইডেন মার্করামকে তুলে নেন দারুণ বোলিং করা তাসকিন। তার জোড়া শিকারের মাঝে কুইন্টন ডি কককে ফেরান মেহেদী।
কিন্তু ৩৩ রানে তিন উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকাকে কক্ষচ্যুত হতে দেননি অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
চতুর্থ উইকেটে ভ্যান ডার ডুসেনের (২২) সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ঠান্ডামাথায় ম্যাচ বের করে নেন তিনি।
জয়ের দুয়ারে এসে নাসুমের স্পিনে ডুসেন আউট হলেও ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৩৯ বল হাতে রেখেই দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন বাভুমা।
২৮ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। চার ওভারে ১৮ রানে দুই উইকেট নেন তাসকিন। আরেক পেসার শরীফুল ইসলাম চার ওভারে দেন মাত্র ১৫ রান।
তাদের বোলিং শুধু আক্ষেপই বাড়িয়েছে। ব্যাটাররা যদি ১৩০ রানের পুঁজিও এনে দিতে পারতেন, জয় নামের সোনার হরিণের দেখা পেতেও পারত বাংলাদেশ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ চতুর্থ ওভারের শেষ দুই বলে দুই উইকেট হারায়। ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ নাঈম (৯) মিডউইকেটে ক্যাচ দেন হেনড্রিকসকে।
রাবাদার স্লোয়ারে মার খান বাংলাদেশি ব্যাটার। পরের বলে লেগ-বিফোর হন সৌম্য সরকার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি সৌম্য।
রাবাদাকে তার পরের ওভারের প্রথম বলে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করলেও দুই বল পরে নিজেকে আর বাঁচাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম।
গালিতে ফিল্ডার এনে সফল রাবাদা। হেনড্রিকসের হাত থেকে প্রথম ক্যাচ ফসকে গিয়েছিল। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ডান হাতে ক্যাচ নিতে সমর্থ হন তিনি।
সাজঘরে ফিরে গিয়ে হয়তো আয়নায় নিজের মুখ দেখবেন মুশফিক। বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারায় ২২ রানে।
নিজের প্রথম স্পেলে তিন ওভারে ১৪ রানে তিন উইকেট কুড়িয়ে নেন রাবাদা। চতুর্থও প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন।
ফিরতি ক্যাচের বল তার শরীর থেকে অনেক দূরে থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যান মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু রাবাদা থেকে নিষ্কৃতি পেলেও আনরিখ নরিয়ে থেকে রক্ষা পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। খাটো লেন্থের বল উঠেছিল কাঁধ বরাবর।
মাহমুদউল্লাহর ব্যাট ছুঁয়ে তা জমা হয় পয়েন্টে আইডেন মার্করামের হাতে। নয় বলে তিন রান বাংলাদেশ অধিনায়কের পুঁজি।
উইকেট হারানোর নেশায় যেন পেয়ে বসে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। অষ্টম ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ।
নবম ওভারের প্রথম বলে অধিনায়ককে অনুসরণ করেন আফিফ হোসেন। তার ঘাতক ডুয়াইন প্রিটোরিয়াস। বলের লাইনে না গিয়ে নিজের স্টাম্প হারান বাঁ-হাতি আফিফ।
নিজের খেলা প্রথম বলেই তিনি আত্মসমর্পণ করেন। আফিফ আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশ শেষ পাঁচ ওভারে তিন উইকেট হারায় মাত্র ১৬ রানে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাসও রিভিউ নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি।
৩৬ বলে ২৪ রান করে বিশ্বের একনম্বর টি ২০ বোলার তাবরেইজ শামসির বলে এলবিডব্লু হন নাঈমের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা লিটন।
শামীম হোসেন এই আসরে প্রথম খেলতে নেমে শামসির শিকারে পরিণত হন। ২০ বলে ১১ রান করে লং-অনে মহারাজকে ক্যাচ দেন শামীম।
তাসকিন আহমেদ রানআউট হন নিজের দোষে। ইনিংস সর্বোচ্চ রান আসে যার ব্যাট থেকে, সেই মেহেদী হাসানের (২৫ বলে ২৭) আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ১০০ রান করার আশা শেষ হয়ে যায়।
নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ নেন নরিয়ে। বাংলাদেশের ৮৪ রানের ইনিংসে একমাত্র ছক্কা মেহেদীর।
পরের বলে হিট উইকেট নাসুম আহমেদ। তিনটি করে উইকেট নেন রাবাদা ও নরিয়ে। দুটি উইকেট পান শামসি।